বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে বিদ্রোহ, মানবতা ও সাম্যের অগ্নিকণ্ঠ হিসেবে পরিচিত একজন অসামান্য ব্যক্তিত্ব হচ্ছেন কাজী নজরুল ইসলাম। তাঁর লেখনী যেমন প্রেরণা দিয়েছে স্বাধীনতা আন্দোলনে, তেমনি সুর-সংগীত ও কবিতায় প্রকাশ পেয়েছে এক তেজস্বী চেতনা। এই কারণেই তাঁকে ‘বিদ্রোহী কবি’ বলা হয়। কিন্তু প্রশ্ন হলো,
কাজী নজরুল ইসলামকে বিদ্রোহী কবি উপাধি দেন কে?এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে আমাদের ফিরে যেতে হবে ১৯২২ সালে, যখন নজরুল তাঁর বিখ্যাত কবিতা বিদ্রোহী রচনা করেন। এই কবিতাটি বাংলা সাহিত্য তথা সমাজে এক নতুন জোয়ার আনে। কবিতাটির মধ্য দিয়ে তিনি শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে সংগ্রামের ডাক দেন, এবং উপনিবেশিক শাসকের চোখে হয়ে ওঠেন এক ভয়ঙ্কর কণ্ঠস্বর। এই সময়েই কবি কাজী নজরুল ইসলামের আগুনঝরা বক্তব্য ও সাহসী কলমকে ‘বিদ্রোহী’ হিসেবে চিহ্নিত করেন সমকালীন সাহিত্যবোদ্ধারা।
বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য যে, প্রখ্যাত সাহিত্যিক ও সম্পাদক মোহিতলাল মজুমদার নজরুলের এই অসাধারণ কবিতার জন্য তাঁকে প্রথম "বিদ্রোহী কবি" হিসেবে আখ্যায়িত করেন। মোহিতলাল তাঁর রচনায় নজরুলের ভাবনা, শব্দচয়ন এবং সাহসিকতাকে মূল্যায়ন করে এই বিশেষ উপাধি প্রদান করেন, যা পরবর্তীতে স্থায়ীভাবে নজরুলের পরিচয়ে পরিণত হয়।
এই উপাধির পেছনে ছিল শুধুমাত্র একটি কবিতা নয়, বরং একটি বিপ্লবী চেতনা, যেটি নজরুল তাঁর সারা জীবনের কর্মের মাধ্যমে বহন করেছেন। তিনি ছিলেন একাধারে কবি, সাংবাদিক, সৈনিক ও সংগীতজ্ঞ—যার প্রতিটি কাজেই ফুটে উঠেছে একটি বিদ্রোহী মননের ছাপ।
অতএব, ইতিহাস বলছে—যে ব্যক্তি কাজী নজরুল ইসলামকে ‘বিদ্রোহী কবি’ উপাধি দিয়েছেন, তিনি ছিলেন একজন চিন্তাশীল ও তৎকালীন সাহিত্যের বিশ্লেষক, মোহিতলাল মজুমদার। এই উপাধির মধ্য দিয়ে নজরুলের বিপ্লবী পরিচয় চিরন্তন হয়ে আছে বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে।